স্বদেশ ডেস্ক:
সাধারণত আমাদের বয়স ৩০ বছরের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় হাড়ের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। অর্থাৎ কৈশোরে শরীরের হাড় কাঠামো (কঙ্কাল) সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির পর রিমডেলিং প্রক্রিয়া একটি ভারসাম্যে চলে আসে। যতদিন না পুরুষের বয়স ৪০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছায় এবং নারীর মেনোপজ হয়ে থাকে, ততদিন অস্টিওব্লাস্ট ও অস্টিওক্লাস্ট একই গতিতে কাজ করে। এতে হাড়ের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে স্ট্যাবল থাকে।
মেনোপজের সময় এস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এ সময় অস্টিওব্লাস্টের হার অস্টিওক্লাস্টের তুলনায় কম হয়। ফলে শুরু হয় হাড় ক্ষয়। মেনোপজ চলাকালে প্রায় ৫ বছরব্যাপী যে সময়কাল, সে সময় একজন নারীর হাড়ের ঘনত্ব ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
নারীর তুলনায় পুরুষের হাড় ক্ষয়ের মাত্রা কিছুটা ধীরগতিতে হয়। তবে তারাও হাড় ক্ষয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং বয়স ৪০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছলে তাদের হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়। ফলে দ্রুতগতিতে হাড় ক্ষয় শুরু হয়।
অস্টিওপোরোসিস : অস্টিওপোরোসিস হাড়ের এমন এক রোগ, যে কারণে হাড়ের ভেতরে ফাঁপা সৃষ্টি হয়। এতে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফলে হাড় ভাঙার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এটি একটি নীরব ব্যাধি, যা বোন ফ্র্যাকচার হওয়ার আগে বোঝা যায় না। এ রোগের কারণে হাড় ক্ষয়ের জায়গাগুলো হলোÑ মেরুদ-, কোমর, কব্জি ইত্যাদি। দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রিস্ক ফ্যাক্টর বা হাড়ের জন্য ঝুঁকির কারণ
ডায়েট : ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, অন্যান্য ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-বি১২, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক। এসব উপাদানের ঘাটতি হলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জেনেটিক : আগে পরিবারের হাড় ক্ষয়জনিত রোগের ইতিহাস থাকলে।
হরমোনাল : কম বয়সে মেনোপজ, হাড়ের ঘনত্ব যদি কম থাকে।
মেডিক্যাল কারণ : রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হাইপারথাইরোডিসম, ক্রনিক লিভার ডিজিস থেকে থাকলে।
ড্রাগ : স্টেরয়েড (যেমনÑ প্রেডনিসোলোন, ডেক্সামেথাসোন, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর ইত্যাদি) সেবন করলে।
অস্টিওপোরোসিসের পরিসংখ্যান : প্রতিবছর প্রায় ১৬ লাখ মানুষ হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ২৪ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বোন ফ্র্যাকচার হওয়ার ১ বছরের মধ্যেই মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৫০ শতাংশ হাড়ভাঙা রোগীর স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা শিগগির হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা অতিক্রম করবে। তাই এটি হৃদরোগ থেকেও বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা দেবে। ৩ জনের মধ্যে ১ জন নারী এবং ৫ জনের মধ্যে ১ জন পুরুষ (যাদের বয়স ৫০ বছরের ওপরে), তারা অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হবেন (আইওএফ)।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান : বর্তমানে দেশে হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। প্রায় ৪০ শতাংশ নারী (১৬-৪৫ বছর বয়স্ক) হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত। পুরুষ থেকে নারীদের অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। একজন ব্যক্তির প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রতিদিন গড় ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ মাত্র ৩০৩ মিলিগ্রাম।
রোগের লক্ষণ : অস্টিওপোরোসিস বেশিরভাগ সময়ই নীরবে আক্রান্ত করে এবং বোন ফ্র্যাকচার হওয়ার আগে তা বোঝা যায় না। অস্টিওপোরোসিস বা এর আগের পর্যায়ের নাম অস্টিওপেনিয়া, যা হাড় দুর্বল করে এবং হাড়ভাঙার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যে ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে : ব্যাক পেইন, যা অস্থিভঙ্গ বা কলাপসড ভার্টেব্রা থেকে হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা কমে যাওয়া। ঝুঁকে থাকা (হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময়)। খুব সহজে বোন ফ্র্যাকচারের ঘটনা ঘটা।
পিপিআই জাতীয় ওষুধগুলো হাড় ক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে একটি কারণ : দীর্ঘকালীন পিপিআই ব্যবহার (৫ বছর বা তার বেশি) হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিসজনিত ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পিপিআই জাতীয় ওষুধ খাওয়ার কারণে ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যেতে পারে অথবা অস্টিওক্লাস্ট প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পিপিআই ব্যবহারের কারণে।
পিপিআই অস্টিওক্লাস্ট বেইজড ভ্যাকুওলার প্রোটন পাম্প ব্লক করে দিতে সক্ষম এবং এ কারণে বোন টার্নওভার কমে যেতে পারে। তাই অস্টিওক্লাস্টের প্রোটন পাম্প কার্যকলাপ বাধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তা হাড়ের পুনরায় ক্যালসিয়াম শোষণ এবং রিলিজ করার ক্ষেত্রে সরাসরি বাধার সৃষ্টি করে।
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের উপায় : পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ। যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা। অপুষ্টি এড়িয়ে চলা। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা। পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করা। ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
ক্যালসিয়ামের ব্যাপারে প্রাথমিক তথ্য : ক্যালসিয়াম হাড়ের মূল খনিজ উপাদান। স্নায়ু ও মাংসপেশির জন্যও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। শরীর যদি তা পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায়, তা হলে তা হাড় থেকে শোষণ করে নেয়। প্রতিদিন ১০০০-১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দুধ ও ডেইরি পণ্যগুলো ক্যালসিয়ামের মূল উৎস হলেও এগুলো গ্রহণের পরিমাণ খুব কম।
বাংলাদেশের অবস্থা : বাংলাদেশে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-ডি গ্রহণ করে থাকে (৩০-৫০ ন্যানোগ্রাম), ৯৭ শতাংশ মানুষ মাত্র ১০-২৯ ন্যানোগ্রাম ভিটামিন-ডি গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে ৮২ শতাংশ মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীর রক্তে ভিটামিন-ডি’র পরিমাণ কম (স্টাডি, মার্চ ২০১৮; বারডেম ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিক্যাল কলেজ)।
ক্যালসিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস
ডেইরি : দুধ, পনির, কম ফ্যাটযুক্ত দই।
প্রোটিন : কাঁটাসহ সার্ডিন মাছ, অ্যালমন্ড।
সবজি : ফুলকপি, বাঁধাকপি।
ভিটামিন-ডি : এটি ক্যালসিয়াম শোষণ, শক্তিশালী হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের নিয়মিত মিনারেল কনসেনট্রেশন সাহায্য করে। শুধু সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি’র চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ভিটামিন-ডি’র দৈনিক চাহিদা প্রতিদিন ১০-১২ মাইক্রোগ্রাম। শুধু খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে যথেষ্ট ভিটামিন-ডি পাওয়া খুব কঠিন।
ভিটামিন-ডি’র প্রাকৃতিক উৎস
চর্বিযুক্ত মাছ : টুনা, স্যালমন।
ডেইরি : ভিটামিন-ডিযুক্ত দুধ, পনির।
প্রোটিন : ডিমের কুসুম।
ক্যালসি-প্রো (উচ্চ পরিমাণ ক্যালসিয়ামযুক্ত, ফ্যাটমুক্ত মিল্ক পাউডার)। এটি একটি উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ মিল্ক পাউডার। ক্যালসি-প্রোতে উচ্চ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি এবং অন্যান্য দরকারি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এটি ক্যালসিয়াম পরিশোষণে সাহায্য করে, পুষ্টি সরবরাহ এবং হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো সরবরাহ করে। ক্যালসি-প্রোতে ভিটামিন-কে বিদ্যমান, যা স্পেশাল বোন প্রোটিন অ্যাকটিভেট করে এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের গভীরে পৌঁছে দেয়। দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে (১০০০-১৩০০ মিলিগ্রাম) এবং ভিটামিন-ডি (১০-২০ মাইক্রোগ্রাম)-এর চাহিদা পূরণ করে।
ফন্টেরা ক্যালসি-প্রো’র জন্য দিচ্ছে সর্বোচ্চ মানের নিশ্চয়তা : আমরা নিউজিল্যান্ডভিত্তিক ফন্টেরা কো-অপারেটিভ থেকে সর্বোচ্চ মানের পণ্য সংগ্রহ করে থাকি (ফন্টেরা ডেইরি ইন্ডাস্ট্রিতে একটি সমাদৃত নাম)। সর্বোচ্চ মানের ডেইরি পণ্য এবং খাঁটি মানের নিশ্চয়তার জন্য নিউজিল্যান্ড বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।